লেখক মোঃ আতিকুর রহমান
মানবাধিকার কর্মী।
বাংলাদেশের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম—যারা মোট ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ—তাদের প্রত্যাশা ও দাবি এবার নির্বাচনের চরিত্রকে অনেকাংশে প্রভাবিত করবে। এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো তরুণদের প্রত্যাশা, উদ্বেগ এবং প্রস্তাবিত সমাধান।
তরুণ ভোটারদের গুরুত্ব:-
বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাঠামোতে তরুণরা একটি শক্তিশালী অংশ। ইলেকশন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ভোটারদের সংখ্যা সর্বাধিক। তারা প্রযুক্তি-সচেতন, কর্মসংস্থানমুখী এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা রাখে।
তরুণদের প্রত্যাশা কী?
তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে কথা বলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্লেষণ করে এবং গবেষণার ফলাফলে যে কয়েকটি বড় প্রত্যাশা উঠে এসেছে তা হলো,
১. সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন
তরুণদের প্রথম দাবি হলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন। তারা চায় কোনো ধরনের প্রভাব, সহিংসতা বা জালিয়াতি ছাড়া ভোটগ্রহণ হোক।
এক তরুণ ভোটার বলেন: “আমরা চাই ভোটের দিন যেন সবাই নিরাপদে ভোট দিতে পারে। যেন ভোট কেন্দ্র দখল বা সন্ত্রাস না হয়।
২. প্রযুক্তির ব্যবহার ও স্বচ্ছতা
তরুণরা চায় ইভিএম, সিসি ক্যামেরা, লাইভ ভোট গণনা ইত্যাদি প্রযুক্তির ব্যবহার, যাতে অনিয়মের সুযোগ না থাকে।
যতটা সম্ভব ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করলে স্বচ্ছতা বাড়বে, মন্তব্য এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর।
৩. যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন
তরুণরা চায় শিক্ষিত, দূরদর্শী, দুর্নীতিমুক্ত প্রার্থী। তারা রাজনীতিতে নতুন মুখ দেখতে আগ্রহী, যারা প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে কাজ করবে।
৪. সহিংসতামুক্ত পরিবেশ
প্রতিটি নির্বাচনের সময় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তরুণরা চায় এবার নির্বাচনে সহিংসতা না হোক, যাতে ভোটাররা নিরাপদে কেন্দ্রে যেতে পারে।
৫. নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বাস্তবতা
তরুণরা চায় রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবভিত্তিক হোক, শুধু ভোটের জন্য মুখের বুলি না।
সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা:-
তরুণরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। তারা ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তি ঠেকাতে ইসি ও সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছে।
গবেষণা ও জরিপের ফলাফল:-
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি পলিটিক্যাল সায়েন্স রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপে দেখা গেছে:
৭৮% তরুণ চায় নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন।
৬৫% তরুণ নতুন প্রজন্মের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহী।
৮২% তরুণ চায় নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধ হোক।
তরুণদের দাবির সারসংক্ষেপ:-
✅ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, প্রযুক্তি-ভিত্তিক স্বচ্ছতা,নতুন ও যোগ্য প্রার্থী,সহিংসতামুক্ত পরিবেশ,বাস্তবসম্মত ইশতেহার
পরিশেষে:-আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ও প্রত্যাশা পূরণে বড় চ্যালেঞ্জ। তারা শুধু ভোট দিতে চায় না, তারা চায় পরিবর্তন, সুশাসন এবং উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। যদি তাদের আশা পূরণ হয়, তবে নির্বাচনের ফলাফল হবে গণতন্ত্রের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা।