মোঃ আতিকুর রহমান:-
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির বিস্তার যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনি এটি নানা ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, মিথ্যা তথ্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এআই দ্রুতই সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হতে পারে।
১. এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও আশীর্বাদ
শিক্ষা ও গবেষণা: এআই দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ, অনুবাদ, এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।
স্বাস্থ্যখাত: রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরামর্শ এবং ওষুধ আবিষ্কারে এআই ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু দেশে সাফল্য দেখিয়েছে।
অর্থনীতি: শিল্প উৎপাদন, ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এআই ভূমিকা রাখতে পারে।
দুর্যোগ মোকাবিলা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে এআই অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
২. গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঝুঁকি
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো নতুন নয়, তবে এআই এ প্রবণতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
ডিপফেক ভিডিও: কারো কণ্ঠ ও মুখমণ্ডল নকল করে মিথ্যা ভিডিও তৈরি করা এখন সহজ হয়ে গেছে।
ভুয়া খবর তৈরি: এআই চালিত টুল দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাস্তবসম্মত কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ লেখা সম্ভব।
সামাজিক অস্থিরতা: ধর্ম, রাজনীতি বা সামাজিক ইস্যুতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়া সম্ভব।
৩. ব্যক্তিগত শত্রুতায় এআই-এর অপব্যবহার
প্রতিশোধমূলক ষড়যন্ত্র: ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে কারো সম্মান নষ্ট করতে মিথ্যা ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হতে পারে।
ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি: ডিপফেক কনটেন্ট ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ইতোমধ্যেই বিশ্বে ঘটছে।
মানসিক ক্ষতি: অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক জীবনে বড় ধাক্কা দিতে পারে।
৪. আইনি ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশে সাইবার আইন থাকলেও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা এখনো স্পষ্ট নয়।
আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা: প্রযুক্তি সনাক্ত ও প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল সীমিত।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: গ্লোবাল এআই প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে কার্যকর সমন্বয় জরুরি, কারণ অধিকাংশ ভুয়া কনটেন্ট বিদেশি সার্ভার থেকে ছড়ায়।
৫. সরকারের করণীয়
আইন প্রণয়ন: ডিপফেক ও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধে কঠোর ও হালনাগাদ আইন প্রণয়ন।
প্রযুক্তিগত সুরক্ষা: গুজব সনাক্তকারী ও প্রতিরোধকারী এআই টুল তৈরি ও ব্যবহার।
জনসচেতনতা: জনগণকে এআই-ভিত্তিক মিথ্যা তথ্য চেনার পদ্ধতি শেখানো।
দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা: ভুয়া কনটেন্ট পাওয়া মাত্র সেটি অপসারণের জন্য বিশেষ সেল গঠন।
এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এটি সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে সরকার, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম এবং জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে। নইলে গুজব, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রচারণা আমাদের সমাজে গভীর বিভক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।