নিজস্ব প্রতিনিধি :
সমাজের সচ্ছল শ্রেণি ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি করতে ২০০৮ সালে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ঝাউলাহাটি এলাকার বড় মসজিদের সামনে গড়ে তোলা হয় এক অনন্য উদ্যোগ—“মানবতার দেয়াল”। এটি ছিল এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, কিন্তু আজ তা মানবিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে সারা সমাজে আলোচিত।
মানবতার দেয়াল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী মোঃ আনোয়ার হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে আসছেন। তাঁর মতে,
অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এটা এক ধরনের আনন্দ। সমাজের সম্পদ শুধু গুটিকয়েক মানুষের জন্য নয়, সবার জন্য। এই চিন্তা থেকেই মানবতার দেয়ালের সূচনা।
মূলত, সচ্ছল মানুষদের কাছ থেকে অপ্রয়োজনীয় হলেও ব্যবহারযোগ্য জামাকাপড়, জুতা, চাদর, কম্বল এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। এগুলো মানবতার দেয়ালে সাজিয়ে রাখা হয়, যাতে গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ বিনামূল্যে নিয়ে যেতে পারে।
এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই, নেই কোনো প্রশ্ন। যার প্রয়োজন আছে, সে চুপচাপ এসে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে পারে।
এই দেয়াল শুধু পোশাক বিতরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরিধি ক্রমশ বেড়েছে। মোঃ আনোয়ার হোসেন এর নেতৃত্বে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হয়—
দুস্থ ও অসহায় মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা
চিকিৎসার খরচ বহন করা
হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো
তাঁর প্রচেষ্টায় অসংখ্য সুবিধাবঞ্চিত মানুষ নতুন জীবন পেয়েছেন।
মোঃ আনোয়ার হোসেন শুধু মানবতার দেয়ালেই থেমে থাকেননি। তিনি যুক্ত হয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক ফাউন্ডেশন’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহপরিচালক হিসেবে। তাঁর লক্ষ্য—
দেশের গরীব, অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার বাস্তবায়ন।
২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ আজ ১৭ বছর অতিক্রম করেছে। মানবতার দেয়াল কেবল একটি দেয়াল নয়, এটি মানবিকতার প্রতীক, দরিদ্র মানুষের হাসির কারণ। এটি প্রমাণ করেছে যে, ছোট একটি পদক্ষেপও সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
এখন মানবতার দেয়াল হয়ে উঠেছে একটি অনুপ্রেরণার নাম, যা দেশের নানা প্রান্তে একই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহ জাগাচ্ছে।
মোঃ আনোয়ার হোসেনের মানবতার দেয়াল প্রমাণ করেছে— মানবতা হারিয়ে যায়নি। এখন প্রয়োজন, সমাজের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যাতে কেউ অভাবে, অমানবিকতায় না থাকে। এই উদ্যোগ সারা দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, এমনটাই প্রত্যাশা।