
কেরানীগঞ্জে অবৈধ সিসা কারখানা আবার চালু, ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, ঝুঁকিতে জনস্বাস্থ্য
আসিফ চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা :
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরের করেরগাঁও এলাকায় বন্ধ হওয়ার পরও আবারও সচল হয়েছে একাধিক অবৈধ সিসা কারখানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া ও প্রশাসনের একাংশকে ম্যানেজ করেই রাতের আঁধারে কারখানাগুলো চালু রাখা হচ্ছে। এতে নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক লক্ষাধিক মানুষ জনস্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিনেবেলা তেঘরিয়া ইউনিয়নের মুজাহিদ নগর রাস্তার পাশে কারখানার ভেতরে ২০-৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ পুরোনো ব্যাটারির উপরের অংশ খুলে প্লেট বের করছেন।আবার কেউ ব্যাটারি থেকে অ্যাসিড বের করছেন। এসব শ্রমিক পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে অ্যাসিড বের করা ও সিসার কাজ করছে।
আর সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত আব্দুলাহপুরের করেরগাও পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা গলানো হয়। এতে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো এলাকা।সিসা ধোঁয়া বিলের পানির রং কালচে আকার ধারণ করেছে ও বিলের মাছ মারা যাচ্ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা, চর্মরোগ ও নানা স্বাস্থ্যসমস্যা বাড়ছে। অনেকে নিয়মিত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ছুটছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর প্রশাসন মাঝে মাঝে লোক দেখানো অভিযান চালায়। তবে অভিযান শেষে রাতেই মধ্যেই কারখানাগুলো আবারও চালু হয়। উপজেলা অফিসারদের ও থানার ওসিকে ম্যানেজ করে এই কারখানাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছে। প্রশাসনকে বলছি লোক দেখানো অভিযান নয়, বরং স্থায়ীভাবে এসব অবৈধ কারখানা বন্ধ করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশাসন এলে এক-দুটি কারখানাকে জরিমানা করে চলে যায়। পরে আবার সব আগের মতোই চলতে থাকে। অবৈধ কারখানার পরিচালক প্রভাবশালী বা অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে কারখানা পরিচালনা করে। বন্ধ করা কারখানা আবার চালু করা আইনের অপব্যবহারের উদাহরণ, যা আইনের প্রয়োগ ও নজরদারির দুর্বলতা নির্দেশ করে।
কারখানার শ্রমিকরাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক জানান, শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগে ভুগলেও ১৫ হাজার টাকার বেতনে তারা বাধ্য হচ্ছেন এ বিপজ্জনক কাজে। প্রতিদিন রাত ৯টা থেকে ভোর পর্যন্ত পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করা হয়, পরে তা বাজারে বিক্রি করা হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিসা গলানোর সময় নির্গত ধাতব উপাদান শরীরে প্রবেশ করলে কিডনি, লিভার ও স্নায়ুতন্ত্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহুয়া শারমিন মুনমুন বলেন, ‘সিসা এমন এক ক্ষতিকর পদার্থ, যা মাটিতে পড়লে সেখানে কোনো ফসল হবে না। হলেও তা মানবদেহের জন্য বিষ হয়ে উঠবে।’
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া কে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলো যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
কেরানীগঞ্জে রাজস্ব সার্কেল দক্ষিণ সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফতাব আহমেদ বলেন, পরিবেশ দূষণ করে এমন কোনো কারখানা চলতে দেওয়া হবে না। অবৈধ সিসা কারখানার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মোঃ আসিফ চৌধুরী
১৮:০৯:২০২৫




















