
নিজস্ব প্রতিনিধি:
বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গলিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান কাদের ফরাজীর ছেলে বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন এক চিত্র, যা স্থানীয়দের হতবাক করে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অল্প কিছুদিন আগেও বেল্লাল ছিলেন সাধারণ পরিবারের একজন যুবক। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছেন—যেন “আঙুল ফুলে কলাগাছ”।
ত্রাণের টিন দিয়ে ঘর নির্মাণ:-
সরোজমিন তদন্তে জানা গেছে, মাজকাজির চর বেপারী বাড়িতে, অর্থাৎ বেল্লালের নানাবাড়িতে, সরকারি ত্রাণের ৭ বান টিন ব্যবহার করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ—ত্রাণের টিন যাদের মাঝে বিতরণের কথা ছিল, তা অবৈধভাবে বেল্লালের দখলে গিয়ে তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
বিল্ডিং ও ব্যবসা সাম্রাজ্য:-
পাতারহাট উত্তর বাজার গরুরহাট এলাকায় বেল্লাল জমি কিনে ইতোমধ্যেই একটি দুই তলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। এছাড়া মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দরে একটি ৫ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ভবনের ২য় তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তদন্তে আরও জানা গেছে, রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় “ভগ্নিপতির নামে” একটি স্বর্ণের দোকান পরিচালনা করছেন বেল্লাল, যদিও প্রকৃত মালিকানা তারই বলে দাবি স্থানীয় সূত্রের।
চেয়ারম্যান পিতা ও পরিবারের নামে সম্পত্তি:-লেংগুটিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় বেল্লালের নামে ৪ শতক জমি, এবং তার পিতা চেয়ারম্যান কাদের ফরাজীর নামে আরও ৪ শতকে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। ওই বাড়িতে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া চরপশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা, জানালা, গ্রিল ও টয়লেটের কমোড ব্যবহার করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
সরকারি সুবিধার অর্থ আত্মসাৎ:-২০১৭ সালের দিকে ডিপ টিউবওয়েল স্থাপনের জন্য কাসেম মাস্টারের কাছ থেকে ২০,০০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এছাড়া ত্রাণের চাল বিতরণের সময় বেল্লাল ব্যক্তিগতভাবে জড়িত থেকে বিতরণের পর খালি বস্তা ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন, যা না দিলে পরবর্তীতে ত্রাণ বন্ধের হুমকি দিতেন। পরবর্তীতে এসব খালি বস্তা অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বেল্লাল ইউনিয়নে “কোটিপতি যুবক” হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—তার এই সম্পদের উৎস কোথায়? সরকারি দায়িত্বে থাকা পিতার ক্ষমতার অপব্যবহারেই কি এই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠেছে?
স্থানীয় প্রশাসন ও দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) সূত্রে জানা যায়, বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে অভিযোগের পরও তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই, যা জনমনে হতাশা ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
জাঙ্গলিয়া ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন—দুর্নীতির এমন দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাগুলো অবিলম্বে তদন্ত করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জনপ্রতিনিধি বা তার পরিবার জনসেবার নামে জনগণের সম্পদ লুটপাট করতে না পারে।
স্থানীয় সাধারণ মানুষ বলেন, “একজন চেয়ারম্যানের পুত্র যদি সরকারি সম্পদ ও ত্রাণ সামগ্রী ব্যবহার করে নিজের সম্পদ গড়ে তোলেন, তবে সেটি কেবল আইনভঙ্গ নয়—এটি জনগণের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
প্রশাসন, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও দুদকের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে—অভিযোগের বিষয়গুলো দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। অন্যথায় জনগণের আস্থা ও সুশাসনের ধারণা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

























