
দুই জেলায় চাঞ্চল্যকর হত্যা বস্তাবন্দী লাশ ও ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০
আসিফ চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা :
১. কেরাণীগঞ্জের সৎ ছেলে হত্যা মামলার ঘাতক পিতা আজহারুল সরদার (৩৬)’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
২. ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিলের ভিতর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনায় প্রধান আসামি জহুরুল মুন্সী @ সুলতান জহির (২৫)’কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।)
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সন্ত্রাসবাদ, হত্যা, মাদক, অবৈধ অস্ত্র ও সংঘবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে র্যাব জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। অপরাধ দমনে র্যাবের নিরলস প্রচেষ্টা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১০ গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। গত ০৬/০৮/২০২৫ তারিখ র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ০৫ রাউন্ড তাজা গুলি ও ম্যাগজিনসহ ০১ টি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার এবং ০১ জন আসামিকে গ্রেফতার করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অনলাইন নিউজে প্রকাশিত ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সৎ পিতার হাতে ছেলে খুন এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বিল থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার বিষয়ক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা’দ্বয়ের প্রধান আসামিদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে র্যাব, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে স্বস্তি ও আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
ঘটনা-০১ঃ তফুরা খাতুন (৩৪) ও তার ছেলে রাকিবুল সরদার (১৪) ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া নাজিরেরবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। রাকিবুল স্থানীয় একটি এমব্রয়ডারি কারখানায় কর্মরত ছিলেন। তফুরা খাতুনের প্রথম স্বামী খায়রুল সরদার মৃত্যুবরণ করলে তিনি দুই বছর আগে মো: আজহারুল সরদার (৩৬)’কে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পর নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আজহারুল’কে অনুমান ৩/৪ মাস পূর্বে তালাক দেন। এরপর থেকে আজহারুল তাকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিল। গত ১৪/০৮/২০২৫ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় রাকিবুল প্রতিদিনের মতো কাজে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। পরদিন গত ১৫/০৮/২০২৫ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম রাকিবুলের খোঁজ না পেয়ে ভিকটিমের মা তফুরা খাতুন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। তফুরা খাতুনের সাবেক স্বামীর নিকট ছেলে খোঁজ জানতে চাইলে আসামি আজহারুল সঠিক তথ্য দেয় না। অনেক খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে আজহারুল জানায় যে, রাকিবুল তার সঙ্গে সাতক্ষীরায় আছে এবং তিনি তফুরা খাতুনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে কিছু টাকা নেয়। গত ১৬/০৮/২০২৫ তারিখ সকালে তফুরা খাতুন মোবাইল ফোনে জানতে পারেন যে, ভিকটিম রাকিবুলের মৃতদেহ আসামি আজহারুলের ভাড়াবাড়িতে রয়েছে। পরে থানা পুলিশ ৯৯৯ এর মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে গত ১৬/০৮/২০২৫ তারিখ সকাল অনুমান ১১.৩০ ঘটিকার সময় স্থানীয়দের সহায়তায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া পশ্চিম পাড়ায় আজহারুলের ভাড়াবাড়ি থেকে রাকিবুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। উক্ত ঘটনায় ডিসিস্টের মা বাদী হয়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করলে মামলা নং- ৪৬, তারিখ ১৭/০৮/২০২৫ খ্রি., ধারা- ৩০২/২০১ পেনাল কোড, ১৮৬০ রুজু হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব-১০ বরাবর একটি অধিযাচনপত্র প্রেরণ করেন। পরে *র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৬ এর সহযোগিতায় গতকাল ১৭/০৮/২০৫ তরিখ রাত অনুমান ২১.২৫ ঘটিকায় কেএমপি, খুলনার হরিণটানা থানাধীন জিরো পয়েন্ট মোড়ে অভিযান পরিচালনা করে এবং হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো: আজহারুল সরদার (৩৬), পিতা- সামাদ সরদার, সাং- কেশবপুর, থানা- কেশবপুর, জেলা- যশোর’কে গ্রেফতার করে। অর্থাৎ মামলা রুজুর ৬ ঘন্টার মধ্যে* প্রধান আসামিকে র্যাব গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গত ১৪/০৮/২০২৫ তারিখ দিবাগত রাত অনুমান ২৪.০০ ঘটিকায় সময় আজহারুল তার ভাড়াবাড়িতে রাকিবুলকে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে এবং মরাদেহ গুমের চেষ্টা করে।
ঘটনা-০২ঃ গত ১৩/০৮/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ১৫.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিম মো: রেদুয়ান (২৮), সাং- বাইশরশী, থানা- সদরপুর, জেলা- ফরিদপুর তার ব্যক্তিগত সুজুকি মোটরসাইকেল ও একটি আইফোনসহ বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন। দিন শেষে ভিকটিম বাসায় না ফেরায় তার মা রাবেয়া বেগম (৪৬) তার ছেলের বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারেন, রেদুয়ান বিকাল অনুমান ১৬.০০ ঘটিকার সময় ফুকুরহাটি থেকে ভাঙ্গার দিকে গিয়েছিলেন। ভিকটিমের মা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না পেয়ে তিনি ফরিদপুরের সদরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন এবং ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে নিখোঁজ সংক্রান্ত পোস্ট দেন। পরবর্তীতে গতকাল দুপুরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে রাবেয়া বেগম ভাঙ্গা থানাধীন তুজারপুর ইউনিয়নের চারালদিয়া গ্রামের একটি বিল থেকে পানিতে ভেসে থাকা একটি অজ্ঞাত মরদেহ শনাক্ত করতে গিয়ে নিশ্চিত হন যে, মৃতদেহটি তার ছেলে রেদুয়ানের।এ ঘটনায় রেদুয়ানের মা বাদী হয়ে ভাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং- ১৬, তারিখ- ১৮/০৮/২০২৫ খ্রি., ধারা- ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি গ্রেফতারে র্যাব-১০ বরাবর একটি অধিযাচনপত্র প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অদ্য ১৮/০৮/২০২৫ তরিখ রাত অনুমান ০৩.২৫ ঘটিকায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা চারালদিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো: জহুরুল মুন্সী @ সুলতান জহির (২৫), পিতা- লুকমান মুন্সী, সাং- চারালদিয়া, থানা- ভাঙ্গা, জেলা- ফরিদপুর’কে গ্রেফতার করে। অভিযানে আসামির নিজ বাড়ি হতে হত্যাকান্ডে চাকু, ব্যাংক এশিয়া এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, মানিব্যাগ, জোড়া পাদুকা ও রক্তমাখা জামাকাপড় এবং আসামির কথিত মতে মাদারীপুর জেলার শিবচর জামেআতুস সুন্নাহ মাদ্রসা থেকে ডিসিস্টের ব্যক্তিগত সুজুকি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি মো: জহুরুল মুন্সী সুলতান জহির স্বীকার করে যে, রেদুয়ানের সঙ্গে তার পূর্বে সমকামিতার সম্পর্ক ছিল। পরবর্তীতে সম্পর্কের অবসান ঘটাতে চাইলে রেদুয়ান তাকে বাধ্য করার চেষ্টা করে এবং ১৩/০৮/২০২৫ তারিখ বিকালে আসামির নিজ বাড়িতে সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাধ্য করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১৩/০৮/২০২৫ তারিখ বিকাল অনুমান ১৬.৩০ ঘটিকায় নিজ বাড়িতে রেদুয়ানকে চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে এবং *মৃতদেহটি পাশের বিলে ফেলে দেয়।গত ১৬/০৮/২০২৫ তারিখ রাতে আসামি জহুরুল মৃতদেহের পঁচা-দূর্ঘন্ধ পেয়ে বিলে গিয়ে মৃতদেহটি ভেসে থাকতে দেখে মৃতদেহের পেটের সঙ্গে জিআই তার দিয়ে দুটি বালুর বস্তা বেঁধে পাশের বিলে ফেলে দেয়। পরে স্থানীয় জনগণ গতকাল ১৭/০৮/২০২৫ তারিখ দুপুরে থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে বিকালে এসে মৃতদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন ।
মোঃ আসিফ চৌধুরী
১৮:০৮:২০২৫