সাত বছরের দীর্ঘশ্বাস, কেরানীগঞ্জ থেকে হারিয়ে যাওয়া তরুণ এখনো ফেরেনি ঘরে
কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর বালুরটেক। ব্যস্ত জনপদ, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের চলাচল। ঠিক সেখান থেকেই ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিখোঁজ হন এক তরুণ— নাম ফরহাদ হোসেন। বয়স মাত্র ২৭। লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর থানার ফলকন ইউনিয়নের বাসিন্দা, সালাউদ্দিন হাওলাদারের প্রিয় সন্তান তিনি। ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাজিরহাট উপকূল কলেজের বি.এ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হিসেবে।
কিন্তু সেই দিনের পর থেকে যেন পৃথিবীটা থেমে গেছে ফরহাদের পরিবারের জন্য। মায়ের চোখে ঘুম নেই, প্রতিদিনের প্রতীক্ষা শুধু একটি প্রার্থনায় বাঁধা— “হয়তো আজ ফিরে আসবে আমার ছেলে।
ফরহাদের চাচা কামরুল ইসলাম ভাঙা কণ্ঠে বলেন,
“ফরহাদ খুবই শান্ত-ভদ্র ছেলে ছিল। সে দিন বলেছিল বাড়ি যাবে। আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু আর ফেরেনি। আজ সাত বছর হয়ে গেল, কোনো খবর নেই।”
মায়ের কণ্ঠে শুধু আহাজারি—
“বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে থাকি, হয়তো হঠাৎ দরজা খুলে ভেতরে ঢুকবে আমার ছেলে। কিন্তু প্রতিদিনই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসি।
ফরহাদের নিখোঁজ হওয়া শুধু একটি পরিবারকে নয়, পুরো গ্রামকে কাঁদাচ্ছে। প্রতিবেশীরাও বলেন, নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সালাউদ্দিন হাওলাদারের পরিবার একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
ফরহাদের স্ত্রী শিরিনও এখনও স্বপ্ন দেখেন, একদিন হয়তো ফিরে আসবেন তার স্বামী। তিনি এখন কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর বালুরটেক টেম্পু স্টেশন এলাকায় জামাল চোরার বাড়িতে থাকেন। একাকিত্ব আর অশ্রু সঙ্গী হয়ে গেছে তার জীবনের।
[caption id="attachment_1475" align="alignnone" width="720"]
ফরহাদের স্ত্রী[/caption]
শিরিনের বাবার নাম নূর জামান, বাড়ি পশ্চিম আটি সোনাকান্দা এলাকায়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার দিনগুলো কাটছে অনিশ্চয়তার আঁধারে।
পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে— যদি কেউ ফরহাদের কোনো খোঁজ পান, তবে অনুগ্রহ করে নিচের নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করা হলো।
ফরহাদের নিজস্ব নাম্বার: 01722-569399, 01822-569399, 01632-304455 চাচা কামরুল ইসলাম: 01731860060 ফরহাদের স্ত্রী শিরিন: 01770-359564।
একজন তরুণের নিখোঁজ হওয়া শুধু একটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের বেদনা। সাত বছর ধরে খুঁজে না পাওয়া এই মানুষটির জন্য প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মানবিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসুক— এটাই ফরহাদের পরিবারের আকুতি।
তারা বিশ্বাস করে, হয়তো একদিন কোনো সহৃদয় মানুষ, কোনো প্রবাসী ভাই কিংবা কোনো পথচারী ফরহাদকে চিনে জানিয়ে দেবেন— “তোমার ছেলে বেঁচে আছে।”
“নিখোঁজ সংবাদ” বলে শুধু একটি বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়তো সহজ, কিন্তু সেই বিজ্ঞপ্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকে মায়ের অশ্রু, স্ত্রীর দীর্ঘশ্বাস আর পরিবারের অন্তহীন অপেক্ষা।
ফরহাদ যদি কোথাও থেকেও এই সংবাদটি দেখতে পান, পরিবার জানাচ্ছে—
“তুমি ফিরে এসো, আমরা এখনো অপেক্ষায় আছি।”