বাবা—জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক
-
-
প্রকাশের সময় :
০৫:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
-
৮৪
পড়া হয়েছে
আতিকুর রহমান:-
জীবনের প্রতিটি মোড়ে যিনি ছায়ার মতো পাশে থেকেছেন, যিনি নিঃশব্দে ভালোবেসেছেন, ত্যাগ করে গেছেন নিজের চাওয়া-পাওয়া—তিনি বাবা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে তিনি শুধু সমাজে নয়, আমাদের পরিবারেও ছিলেন এক জীবন্ত শিক্ষালয়।
বাবা আমাদের জীবনে ছিলেন সেই আলোকবর্তিকা, যিনি নিজের কষ্টের গল্প কখনো শোনাননি, বরং আমাদের মুখে হাসি ফোটাতেই পেয়েছেন আনন্দ। আমরা চার ভাই, এক বোন—সবাই মিলেই ছিলাম তাঁর পৃথিবী। আমাদের আবদার, চাওয়া-পাওয়া, স্বপ্নগুলো পূরণ করতেই যেন তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। অথচ আমরা কেউ কোনোদিন তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি, শুধু নিয়েই গেছি নিরন্তর।
আমার ভাইদের ছোট ছোট ইচ্ছাকে তিনি করে তুলেছেন বড়। কারো এই সমস্যা, কারো টাকা দরকার, কারো অসুস্থ তা—সব কিছুর পেছনে ছিল তাঁর সীমাহীন ভালোবাসা আর নিরব ত্যাগ। আমি নিজেও একজন বাবা হয়েছি আজ। কিন্তু যতই চেষ্টা করি না কেন, বাবার মতো নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে শিখিনি এখনও।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে বুঝি—বাবার মতো সম্পর্ক আর কিছুতেই গড়ে ওঠে না। বয়স হয়েছে তাঁর, শরীরটা আগের মতো চলে না, কিন্তু বাবার সেই সংগ্রামী মন আজও থামেনি। আজও তিনি ভাবেন, কীভাবে আমাদের আরও ভালো রাখা যায়। সন্তানদের সুখই যেন তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র।
আজ বুক ভরে বলতে ইচ্ছে করে, “বাবা, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।”
এই ভালোবাসা কেবল কথায় নয়, আপনার প্রতি আমার আজীবনের ঋণ স্বীকারের এক ছোট্ট প্রয়াস।
তবে একটা অনুশোচনাও আছে—জীবনে এখনো আপনাকে কিছুই দিতে পারিনি। বরং আপনার কাছ থেকেই শুধু নিয়েই গেছি।
আমার এই অপারগতার জন্য দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন, বাবা। আপনি তো ছিলেন সব সময় মাফ করে দেওয়া মানুষটি।
আপনার হাতের ছায়ায় আমরা বেড়ে উঠেছি। আপনার নীরব পরিশ্রম, সুনিশ্চিত ভবিষ্যতের নিশ্চুপ সংগ্রাম—সবকিছু মিলেই আপনি আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, শ্রেষ্ঠ বন্ধু, শ্রেষ্ঠ অভিভাবক।
আপনাকে নিয়ে গর্ব হয়, বাবা। আপনি আছেন বলেই আজও আমাদের আশ্রয় আছে, ভরসা আছে, শান্তি আছে।