, মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
কেরানীগঞ্জে ডিবির অভিযানে ইয়াবাসহ এক যুবক গ্রেপ্তার: ঢাকায় অবস্থানরত হিজলা মেহেন্দিগঞ্জ কাজিরহাট বাসীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত স্বাধীন সংবাদের ২২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে নূরুল হক নূরকে আমন্ত্রণ বরিশাল-৫ এ প্রথমবারের মতো প্রার্থী হচ্ছেন লায়ন উমার রাযী আজিমপুর কবরস্থানের দুর্ধর্ষ  চাঁদাবাজ আরমান গ্রেপ্তার ঢাকা-৩ আসনে অধ্যক্ষ শাহীনুর ইসলামের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, চিকিৎসাসেবায় ভিড় এলাকাবাসীর জাতীয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভা,ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের মাঝে আর্থিক অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠান ২০২৫ অনুষ্ঠিত। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন, সন্দেহের সুযোগ নেই’– আমান উল্লাহ আমান  লোহজং থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ মনিরুজ্জামানের সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চাঁনপুর রহমানিয়া ইসলামী কওমী ও লিল্লাহ্ বোর্ডিং কর্তৃক আয়োজিত বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত

বেতন ৮০ হাজার, সম্পদ হাজার কোটি টাকার, পুলিশ যখন মাফিয়া

  • প্রকাশের সময় : ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • ৫২ পড়া হয়েছে

 

আসিফ চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা :

 

হারুন অর রশীদ। সবাই তাকে চেনে ডিবি হারুন নামেই। কাগজে কলমে পুলিশ কর্মকর্তা। জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব।

কিন্তু রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সে নিজেই যে দানবে পরিণত হয়, হারুন সম্ভবত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। চাকরি থেকে তার সারা জীবনের আয় ৬ কোটি টাকারও কম। কিন্তু তার এবং পরিবারের সদস্যদের রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। পুলিশের বেশে হারুন হলো লুটেরা দুর্বৃত্ত।

মানুষকে ঠকিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বর্তমানে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা এই দুর্নীতিবাজ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার দেশেই পাওয়া গেছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া হারুন অর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চাকরি পান। পরে জানা যায়, তার বাবা ছিলেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

২০০১ সালে তার পদায়ন আটকে দেয় বিএনপি সরকার। ওয়ান-ইলেভেনের সময় চাকরি স্থায়ী হয় তার। সর্বশেষ ডিআইজি পদমর্যাদার এই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের (ডিবি) সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন ছিল সাকল্যে ৮০ হাজার টাকার মতো।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও তার সম্পদ রয়েছে। এসবের মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি।

এক উত্তরাতেই আছে তার দুই ডজনের বেশি বাড়ি ও ফ্ল্যাট। এসব দেখাশোনার জন্য উত্তরায় আছে অফিস। সেখানের সব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেন কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলম। তার নামেও অনেক সম্পদ গড়েছেন হারুন।

তার অধিকাংশ জোরজবরদস্তি আর মালিককে বেকায়দায়স্থে ফেলে দখল করা বলে অভিযোগ আছে। তার উত্তরার বাড়িগুলোর মধ্যে ৩ নম্বর সেক্টরেই আছে ৬টি বাড়ি ও মার্কেট।

৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১০ কাঠা প্লটে ১০ তলা মার্কেট করেন শ্বশুরের নামে। ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৭ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং ১৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে রয়েছে তার ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন। একই সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর প্লটটি হারুন ৩২ কোটি টাকায় বিক্রি করেন বলে তথ্য আছে। আর রবীন্দ্র সরণিতে ৭ কাঠার ৪১ নম্বর প্লটটি মাসিক ১৪ লাখ টাকায় ভাড়া দেন বলে জানা যায়।

 

১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে হারুনের। একই সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় হারুনের ভূমি অফিস। এখানে তার সব সম্পত্তির কাগজপত্র সংরক্ষিত থাকে।

১৩ নম্বর সেক্টর, জমজম টাওয়ারের পাশে, উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও পূর্বাচলে কয়েক ডজন ফ্ল্যাট রয়েছে হারুনের- এমন সংবাদও জানা যাচ্ছে।

অভিযোগ আছে, বনানী কবরস্থানের পাশে ২০ কাঠার একটি প্লট দখল করে সেটি একটি কোম্পানির কাছে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেন হারুন।

গাজীপুরে তার দায়িত্বকালে অসংখ্য মানুষকে হয়রানির অভিযোগ আছে হারুনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গ্রুপ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হয়ে জমি দখলে তিনি ভূমিকা রাখেন- এমন অভিযোগ আছে অনেক। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জন করেন কোটি কোটি টাকা।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শত কোটি টাকার আলোচিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মালিক হারুন অর রশীদ। তার ভাই ডাক্তার শাহরিয়ার এটি পরিচালনা করেন। ৩০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা বিলাসবহুল এই রিসোর্ট নির্মাণে অনেক মানুষের জমি দখলের অভিযোগ আছে হারুনের বিরুদ্ধে।

গাজীপুরে সবুজ পাতা রিসোর্ট এবং গ্রিন টেক নামে দুটি বিলাসবহুল রিসোর্টের শেয়ার রয়েছে হারুনের। আমেরিকান ডেইরি নামে একটি কোম্পানির এমডি হারুনের স্ত্রী, যেখানে মূলত হারুন বিনিয়োগ করেছেন। টঙ্গীর সাতাইশ মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীর গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভিতরে ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক হোটেল।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে সেসব অভিযোগ তদন্ত করতে দেননি হারুন। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দুদক হারুনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে হারুনের দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়।

জনপ্রিয়

কেরানীগঞ্জে ডিবির অভিযানে ইয়াবাসহ এক যুবক গ্রেপ্তার:

বেতন ৮০ হাজার, সম্পদ হাজার কোটি টাকার, পুলিশ যখন মাফিয়া

প্রকাশের সময় : ০৯:৪৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

 

আসিফ চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা :

 

হারুন অর রশীদ। সবাই তাকে চেনে ডিবি হারুন নামেই। কাগজে কলমে পুলিশ কর্মকর্তা। জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব।

কিন্তু রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন সে নিজেই যে দানবে পরিণত হয়, হারুন সম্ভবত তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। চাকরি থেকে তার সারা জীবনের আয় ৬ কোটি টাকারও কম। কিন্তু তার এবং পরিবারের সদস্যদের রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। পুলিশের বেশে হারুন হলো লুটেরা দুর্বৃত্ত।

মানুষকে ঠকিয়ে, ভয়ভীতি দেখিয়ে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। বর্তমানে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা এই দুর্নীতিবাজ সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার দেশেই পাওয়া গেছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে জন্ম নেওয়া হারুন অর রশীদ মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চাকরি পান। পরে জানা যায়, তার বাবা ছিলেন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা।

২০০১ সালে তার পদায়ন আটকে দেয় বিএনপি সরকার। ওয়ান-ইলেভেনের সময় চাকরি স্থায়ী হয় তার। সর্বশেষ ডিআইজি পদমর্যাদার এই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের (ডিবি) সরকারি স্কেল অনুযায়ী বেতন ছিল সাকল্যে ৮০ হাজার টাকার মতো।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও তার সম্পদ রয়েছে। এসবের মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি।

এক উত্তরাতেই আছে তার দুই ডজনের বেশি বাড়ি ও ফ্ল্যাট। এসব দেখাশোনার জন্য উত্তরায় আছে অফিস। সেখানের সব সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করেন কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলম। তার নামেও অনেক সম্পদ গড়েছেন হারুন।

তার অধিকাংশ জোরজবরদস্তি আর মালিককে বেকায়দায়স্থে ফেলে দখল করা বলে অভিযোগ আছে। তার উত্তরার বাড়িগুলোর মধ্যে ৩ নম্বর সেক্টরেই আছে ৬টি বাড়ি ও মার্কেট।

৩ নম্বর সেক্টরের ৭ নম্বর রোডের ৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ১০ কাঠা প্লটে ১০ তলা মার্কেট করেন শ্বশুরের নামে। ৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৭ কাঠার বাণিজ্যিক প্লট এবং ১৫ নম্বর রোডের ২৩ নম্বর হোল্ডিংয়ে রয়েছে তার ১৪ তলা বাণিজ্যিক ভবন। একই সেক্টরের ৯ নম্বর রোডের ১৪ নম্বর প্লটটি হারুন ৩২ কোটি টাকায় বিক্রি করেন বলে তথ্য আছে। আর রবীন্দ্র সরণিতে ৭ কাঠার ৪১ নম্বর প্লটটি মাসিক ১৪ লাখ টাকায় ভাড়া দেন বলে জানা যায়।

 

১০ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রোডের ৩৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৫ কাঠার একটি প্লট রয়েছে হারুনের। একই সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলায় হারুনের ভূমি অফিস। এখানে তার সব সম্পত্তির কাগজপত্র সংরক্ষিত থাকে।

১৩ নম্বর সেক্টর, জমজম টাওয়ারের পাশে, উত্তরা তৃতীয় পর্ব ও পূর্বাচলে কয়েক ডজন ফ্ল্যাট রয়েছে হারুনের- এমন সংবাদও জানা যাচ্ছে।

অভিযোগ আছে, বনানী কবরস্থানের পাশে ২০ কাঠার একটি প্লট দখল করে সেটি একটি কোম্পানির কাছে ৭০ কোটি টাকায় বিক্রি করেন হারুন।

গাজীপুরে তার দায়িত্বকালে অসংখ্য মানুষকে হয়রানির অভিযোগ আছে হারুনের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন গ্রুপ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হয়ে জমি দখলে তিনি ভূমিকা রাখেন- এমন অভিযোগ আছে অনেক। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্জন করেন কোটি কোটি টাকা।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে শত কোটি টাকার আলোচিত প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মালিক হারুন অর রশীদ। তার ভাই ডাক্তার শাহরিয়ার এটি পরিচালনা করেন। ৩০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা বিলাসবহুল এই রিসোর্ট নির্মাণে অনেক মানুষের জমি দখলের অভিযোগ আছে হারুনের বিরুদ্ধে।

গাজীপুরে সবুজ পাতা রিসোর্ট এবং গ্রিন টেক নামে দুটি বিলাসবহুল রিসোর্টের শেয়ার রয়েছে হারুনের। আমেরিকান ডেইরি নামে একটি কোম্পানির এমডি হারুনের স্ত্রী, যেখানে মূলত হারুন বিনিয়োগ করেছেন। টঙ্গীর সাতাইশ মৌজায় ৮ বিঘা জমিতে কোনো অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ করা হচ্ছে জেএইচ-জিওটেক্স লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীর গুশুলিয়া মৌজায় ছায়াকুঞ্জ-৫ আবাসিক প্রকল্পের ভিতরে ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা হচ্ছে আবাসিক হোটেল।
দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ জমা হয়েছিল ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু ক্ষমতার দাপটে সেসব অভিযোগ তদন্ত করতে দেননি হারুন। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দুদক হারুনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে হারুনের দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায়।