
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি রাকিবুল হাসান সানি ওরফে পেপার সানি (২৯) নামের এক যুবককে গত ১০ জুন গলা কেটে হত্যা করা হয়।তাকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মৃত হিসেবে পাওয়া যায়।এরই মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পল্লবী থানা পুলিশ।
তবে এজহারে নাম থাকা একজন আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়নি থানা পুলিশ। গত সোমবার (২৩ জুন) তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।
তবে এই মাদক ব্যবসায়ের বিরোধ থেকে খুন হওয়া পেপার সানির মামলা নাটকীয়তার মত করে মোড় যেন জটলার মতো ঘুরছেই।১০ জুন সকালে পল্লবীর মিরপুর ১১, মিল্লাত ক্যাম্পের (বি-ব্লক) ৩ নম্বর লাইনে সানির মৃতদেহ পায় এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়। নিহত পেপার সানি মাদক ব্যবসা,ছিনতাই, কিশোর গ্যাং সহ নানান অপরাধে যুক্ত তার নামে রয়েছে একাধিক মামলা।এই মামলায় প্রথম আসামী হিসাবে ১১ নাম্বার বড় মসজিদের বৌ বাজারের ফাজ্জু (৩৫) কে আটক করা হয়।ভুক্তভোগী ফাজ্জুর পরিবারে সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে ফাজ্জু তার বৌ ও দুই সন্তান নিয়ে কক্সবাজার দ্রমনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৫ দিন আগেই বাসের টিকিট সহ থাকার হোটেল বুকিং দিয়ে রেখেছিলো। দ্রমণ শেষে ঢাকায় আসার পথে র্যাব-১৫ বাসের গতিরোধ করে ফাজ্জুকে আটক করে নিয়ে যায়।এই বিষয়ে র্যাব-১৫ এর কাছে জানতে চাইলে বলা হয় পল্লবীর এক হত্যা মামলার আসামী হিসেবে তাকে আটকের নির্দেশ দিয়েছে পল্লবী থানা।ভুক্তভোগী ফাজ্জুর বৌ জানান ঢাকায় এসে থানা থেকে মামলার এজহার নিয়ে দেখেন তার স্বামী ফাজ্জুর নাম নেই তাকে কেন বা কোন অপরাধের জন্যে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে এলাকার কয়েক জন মহিলাকে নিয়ে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)আব্দুল কাইয়ুম এর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি খুব খারাপ ভাষায় কথা বলেন এক পর্যায় থানার একজন পুলিশকে বলেন এলাকাবাসী সবাইকে হাজতে ঢুকাও।ভুক্তভোগীর বৌ বলেন একজন দায়িত্বশীল মানুষের এমন আচরণ মেনে নেয়ার মতো না।ভুক্তভোগীর বৌ বলেন তার স্বামীর নামে অতীতেও কোন মামলা নেই। এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়। এলাকার কিছু নামধারী সাংবাদিক যারা নিজেই মাদকের টাকা খায় এবং অপরাধীদেরকে টাকার বিনিময়ে সহযোগিতাও করে তারাই থানাসহ আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীকে ফাজ্জুর বিষয়ে ভুল-তথ্য দিয়ে ফাঁসিয়েছে প্রকৃত আসামীদের বাঁচানোর জন্যে।ভুক্তভোগীর বৌ বলেন এই হত্যা কাণ্ডের দিন আমি বিকেল থেকে অসুস্থ থাকায় আমার স্বামী বাসা থেকে বের
হয়নি। সেই আমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলো আমার অবস্থার উন্নতি না হওয়াতে ওই রাতে আনুমানিক ১২ টায় আমাকে নিয়ে মিরপুর ১১ নাম্বার ইসলামিয়া হসপিটালে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যায়।তিনি আরও বলেন এই মামলার সুষ্টু তদন্ত করে যদি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন প্রমান পান আমি সর্বোচ্চ শাস্তি মাথা পেতে নিবো এবং এই মামলায় নিহিত সানির পরিবার যাতে ন্যায় বিচার পায় এইটা আমার চাওয়া।
এই বিষয়ে নিহিত সানির মা মামলার বাদী রোজিনা বেগমের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি জানান এই মামলায় কিছু আসামী ধরেছে তবে এদের নাম এজহারে নেই।এই মামলায় ফাজ্জু নামের কোন আসামীকে চিনেন জানতে চাইলে তিনি বলেন আগে বা পরে ফাজ্জু কে আমি চিনি না এই হত্যা কাণ্ডের সাথে সেই জড়িত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন যে না সেই জড়িত না। তিনি বলেন এই সকল আসামী থানা ধরেছে এবং এই বিষয়ে আমাদের কোন কথা থানা পুলিশ শুনছে না।নিহত সানির মা কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে তার ছেলে সঙ্গদোষে আগে রুবেল এর মাল(ইয়াবা)বেঁচতো বেশ কিছু দিন তার ছেলে রাসেলের ইয়াবা বিক্রি করলে ও পরে সে আর রাসেলের ইয়াবা বেচা বাদ দিয়েছিলো।
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই হুমায়ুনের সাথে মুঠো ফোনে কথা বললে এই মামলার বিষয়ে কোন কিছু বলতে যেন হিম-শিম খাচ্ছিলেন পরে ফোনটা অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)আব্দুল কাইয়ুম কে ধরিয়ে দেন তার কাছে জানতে চাইলে যে এই বিষয়ে নিরীহ মানুষদেরকে ও হয়রানি করে মামলা দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যাদেরকে ধরা হয়েছে সবাই এই মামলার আসামী যখন তাকে জানানো হয় যে মামলার বাদীর সাথে কথা হয়েছে তার দাবি আপনারা তাকে কোন সহযোগিতা করছেন না আপনাদের মন মত যাকে তাকে ধরে নিয়ে আসছেন ফাজ্জু এই নামের আসামী তার ছেলে হত্যায় জড়িত না তাও কেন তাকে ধরে কারাগারে প্রেরণ করেছেন ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত)আব্দুল কাইয়ুম বলেন যে বাদীর কোন কথা সুইনেন না বলে কল কেটে দিয়েছেন।
অন্যান্য আসামিদের মধ্যে সম্প্রতি মিরপুর ১১ আলুপট্টি থেকে ইমরান, বৌ বাজার থেকে পারভেজ এবং মিরপুরে মাদক-সন্ত্রাসের অন্যতম গডফাদার রাসেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অনেকেই।
স্থানীয় সূত্র বলছে, রাসেল ও তার দুই ভাই তোফায়েল ওরফে কানা তোফায়েল, সানজু এরা তিন ভাই মিলে মাদক সম্রাজ্য চালায় পুরো পল্লবী জুড়ে।আর তাকে সাহায্য করে ওই এলাকার আরমান,রিয়াদ,রকি সাংবাদিক ফরিদ সহ অনেকে।
এমনকি রকি পেপার সানি হত্যা মামলাতেও জড়িত।
অভিযুক্ত রাসেল অপরাধ জগতের সম্রাট।পরিচয় গোপন রেখে স্থানীয়রা জানান,“পল্লবী থানায় রাসেলের নামে মাদক চোরাচালান,কিশোরগ্যাং সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।এমনকি পল্লবী থানায় পুলিশ হেফাজতে মিরপুরের জনি হত্যা মামলায়ও রাসেলর নাম রয়েছে।ওই সময়ে রাসেল পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো।ধীরে ধীরে পুলিশের ছত্রছায়ায় রাসেল মাদক কারবারি হয়ে ওঠে।ফেনসিডিল দিয়ে শুরু তার এখন ইয়াবার সম্রাট।৫ ই আগষ্টের পর থেকে রাসেল তার দুই ভাই সহ বেপরোয়া তাঁদের বাহিনী এলাকায় বিদেশী অস্ত্র সহ মহড়া ও দিয়েছে একাধিক বার তবে ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে না।নিজেকে বি এন পি নেতা পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় এই রাসেল।
সে ডুইপ প্লটের মাদক সম্রাট হেরোইন মোস্তাকের সাথে প্রতিযোগিতা করে মাদকের ব্যবসা করে।”
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায় এই হত্যা কান্ড রাসেলই করতে পারে করে এবং বাদী পক্ষকে টাকার বিনিময়ে নিজেকে বাঁচানোর জন্যে নিজের বিরোধীদের নাম জড়িয়ে নিজে বাঁচার জন্যে মামলা ঘোলাটে করছে।পল্লবী থানার কনস্টবল নজরুল সহ অনেকে এই রাসেলের হয়ে কাজ করে। এলাকাবাসীর দাবি এই মামলার সুষ্ঠ বিচার যেন হয় এবং পুলিশ যেন নিরপরাধ কোন ব্যক্তিকে এই মামলায় জড়িয়ে হয়রানি না করে।
পরিচয় গোপন রেখে মামলা সম্পর্কে ভয়াবহ তথ্য দেন স্থানীয় কয়েকজন।তাদের ভাষ্যমতে,মিরপুর ১১ বড়ো মসজিদের পাশে (বৌ বাজার),বি ব্লকের ৮ নাম্বার লাইনে রাসেল থাকে।রাসেলের ২ ভাই, ডুইপ প্লটের হেরোইন মোস্তাক,মোস্তাকের প্রতিটি ছেলেই মাদক ব্যবসার সাথে যুক্ত,বিশেষ করে সুমন,সাইমন,মামুন সহ এলাকায় তাঁদের বাহিনী,ওই একি এলাকায় ১১ নাম্বার রোডে
নিলয়,আরজু,কামরান, কুরবান সহ প্রায় ২০ জন এই এলাকায় মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।তারা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে।অথচ পুলিশ কিছুই করে না।
সবমিলিয়ে রাজধানী তথা মিরপুরে পল্লবী থানার নাকের ডগায় মাদকের রমরমা ব্যবসা যেন কোনো ভাবে থামার ইঙ্গিত নেই।কয়েকজন বড় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক মাদক কারবারি দেদারসে মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।এখন দেখার বিষয়- এই মাদকের রমরমা ব্যবসা, কিশোর গ্যাং,নানাবিধ কোন্দলে খুন সহ অসংখ্য অপরাধের স্বর্গরাজ্যের অবসান ঘটিয়ে মিরপুর ১১ তথা পল্লবীতে প্রশাসন শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না এইটাই জনমনে প্রশ্ন।