
মেহেন্দিগঞ্জের রাজনীতির হালচাল: জাতীয়তাবাদী শক্তি ও গণমানুষের প্রত্যাশা
মোঃ আতিকুর রহমান
সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী
মেহেন্দিগঞ্জ একটি রাজনৈতিকভাবে সচেতন জনপদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন ও নানা সামাজিক সংকটের মাঝেও এই অঞ্চলের মানুষ সবসময় রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। এখানে রাজনীতি মানে শুধু দলীয় প্রচার নয়, বরং জনগণের অধিকার আদায়ের মাধ্যম। জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মেহেন্দিগঞ্জের রাজনৈতিক আবহ, বিশেষ করে বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
বিএনপির অবস্থান ও সংগ্রাম
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মেহেন্দিগঞ্জে একসময় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শক্তি ছিল। শহর থেকে গ্রাম, কৃষক থেকে শিক্ষক—সবার মধ্যেই দলটির আদর্শ ও জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রভাব ছিল স্পষ্ট। জনসাধারণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক, তৃণমূলে সক্রিয় নেতাকর্মী ও জনদরদি কর্মসূচির মাধ্যমে দলটি তৎকালীন সময়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছিল।
সংগঠনের চ্যালেঞ্জ ও পুনর্গঠন
বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, মামলা, গ্রেফতার এবং সাংগঠনিক সংকটের কারণে মেহেন্দিগঞ্জ বিএনপি কিছুটা দুর্বল অবস্থায় পড়েছিল। অনেক নেতাকর্মী পলায়নপর, কেউ কেউ রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তবে সম্প্রতি কিছু শিক্ষিত, তরুণ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ মাঠে সক্রিয় হয়ে সংগঠনকে নতুনভাবে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে পুনর্গঠন, কর্মীসভা, মিলাদ, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক মাঠে আবারও আত্মপ্রকাশ করছে।
জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা
বিএনপির প্রতি এখনো একটি বড় ভোটব্যাংক রয়েছে। বিশেষ করে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ, তরুণ বেকার শ্রেণি ও মধ্যবিত্ত জনগণ দলে একটি বিকল্প নেতৃত্ব খুঁজে পান। তারা চায়—নতুন নেতৃত্ব, দূর্নীতিমুক্ত সংগঠন এবং উন্নয়নকেন্দ্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন।
এই জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করে, বিএনপি তার অতীত ঐতিহ্য ও জনসম্পৃক্ততা নিয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠলে রাজনীতিতে ভারসাম্য তৈরি হবে।
জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী আন্দোলন
ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কিছুটা প্রভাব রাখে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে তাদের অবস্থান অনেকটাই নিস্ক্রিয়।
স্থানীয় পর্যায়ে কিছু ধর্মভিত্তিক নেতা মাঝে মাঝে ধর্মীয় ইস্যুতে সক্রিয় থাকলেও নির্বাচনী রাজনীতিতে তারা তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না।
১.ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতি
মেহেন্দিগঞ্জে দলীয় রাজনীতির চেয়ে ব্যক্তি-নির্ভরতা বেশি। যার জনপ্রিয়তা, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা, দানশীলতা এবং তৎপরতা বেশি—তিনিই সাধারণত নির্বাচনে এগিয়ে থাকেন।
এই কারণে দলের তুলনায় ব্যক্তি অনেক সময় বেশি প্রাধান্য পায়।
২.নদীভাঙন ও উন্নয়ন ইস্যু
নদীভাঙন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান—এসব ইস্যুতে রাজনৈতিক নেতারা বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তব কাজ হয় কম। জনগণ এখন রাজনৈতিক বক্তৃতার চেয়ে কাজ দেখতে চায়।
৩.তরুণদের অনীহা ও কিছুটা প্রত্যাবর্তন
রাজনীতির দুর্নাম, দলীয় কোন্দল, মনোনয়নে পক্ষপাত এবং সহিংস রাজনীতির কারণে অনেক তরুণ রাজনীতিতে আগ্রহ হারিয়েছিল। তবে কিছু মেধাবী তরুণ এখন আবার রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে—তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়, মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সমাজসেবামূলক কার্যক্রম করছে।
মেহেন্দিগঞ্জের রাজনীতি এখন পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে। জাতীয়তাবাদী শক্তি তথা বিএনপির সামনে সুযোগ এসেছে—তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করার।
এলাকার জনগণ দলবাজ রাজনীতি নয়, চায় কার্যকর, মানবিক ও জনভিত্তিক রাজনীতি। বিএনপি যদি আদর্শ ও সংগঠনের শক্তি দিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারে, তাহলে মেহেন্দিগঞ্জে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নবজাগরণ অসম্ভব নয়। সময় এসেছে—জনতার ভোট ও মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী, জনবান্ধব ও স্বচ্ছ রাজনীতি গড়ে তোলার।