নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় কর্মরত শিক্ষকরা বর্তমানে একটি গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। শিক্ষকদের বড় একটি অংশ দাবি তুলেছেন, “শিক্ষক যেখানে থাকবে, কেন্দ্রও সেখানে থাকবে”—এই নীতিকে দ্রুত বাস্তবায়ন করার জন্য।
এ বিষয়ে মহাপরিচালক, পরিচালক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজারদের প্রতি সম্মান ও বিনয়ের সাথে আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন এই দাবিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
মূল অভিযোগ ও সমস্যা:
শিক্ষকরা অভিযোগ করছেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে কর্মরত শিক্ষকরা—যাদের অনেকেই মসজিদের ইমাম বা খতিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন—তাদেরকে মসজিদ কমিটির হাত থেকে নানা রকম অবমাননা, চাপ এবং এমনকি বিতাড়নের শিকার হতে হয়। এই পরিস্থিতিতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
একজন শিক্ষক তার চাকরি পাওয়ার জন্য সকল প্রক্রিয়া—আবেদন, সার্টিফিকেট যাচাই, ভাইভা, ট্রেনিং—সম্পন্ন করলেও শুধুমাত্র ইমামতির দায়িত্বে না থাকায়, তাকে ওই কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এতে শিক্ষক মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন এবং তার ন্যায্য অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
বৈষম্যের অভিযোগ:
শিক্ষকদের বড় একটি অংশ মনে করছেন, শুধুমাত্র ইমাম না হওয়ার কারণে কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া একধরনের বৈষম্য। যেখানে শিক্ষকের দক্ষতা, মেধা ও প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তে তাকে শিক্ষকতার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
তারা বলছেন, “মসজিদ কমিটির অযৌক্তিক প্রভাবের কারণে শিক্ষকরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় কেন্দ্রের কাজ ঠিকভাবে করলেও ইমামতি না করার কারণে শিক্ষক পদে টিকে থাকা যাচ্ছে না।”
দাবি: ‘শিক্ষক যেখানে, কেন্দ্র সেখানে’
এই দাবি বর্তমানে দেশের হাজারো শিক্ষক একসঙ্গে তুলেছেন। তাদের যুক্তি, শিক্ষক যখন নির্ধারিত নিয়ম মেনে নিয়োগ পেয়েছেন, তখন তাকে কেন্দ্র থেকে সরানো অবিচার। শিক্ষক যেই জায়গায় অবস্থান করছেন, সেই জায়গাতেই যেন কেন্দ্র পরিচালনা করা হয়—এই দাবি তারা বারবার তুলে ধরছেন।
আন্দোলনের হুঁশিয়ারি:
যদি এই দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে শিক্ষক সমাজ আন্দোলনের পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকরা এই বিষয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন—"লাইক দিন, শেয়ার করুন, সবাইকে জানান, দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে নামতে হবে ইনশাআল্লাহ"।
সমাধানের প্রস্তাবনা:
১. মসজিদ কমিটির প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন ব্যবস্থাপনা গঠন
২. শিক্ষককে স্থায়ীভাবে কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নিশ্চিত
৩. ইমামতি না থাকলেও শিক্ষকের চাকরি ও সম্মান রক্ষা
৪. শিক্ষকদের উপর মসজিদ কমিটির দমননীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক নজরদারি
৫. ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিয়মিত মনিটরিং ও অভিযোগ নিষ্পত্তির সেল গঠন
মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই মহৎ উদ্যোগ যাতে কিছু অসাধু প্রভাবশালীর স্বেচ্ছাচারে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্যই সময় এসেছে শিক্ষক সমাজের এই যৌক্তিক দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার। নইলে আগামী দিনে এই সংকট আরো ঘনীভূত হয়ে শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।