
মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি:
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ২নং চরহোগলা ইউনিয়নে আলোচিত কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটিকে ঘিরে নানা গুজব, ভিডিও ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সরেজমিন তদন্তে বেরিয়ে আসছে এক ভিন্ন চিত্র—যা ইঙ্গিত দিচ্ছে ঘটনাটির নেপথ্যে রয়েছে একটি গভীর ষড়যন্ত্র।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দাবি করা হয়—“মাহামুদুল হাসান চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন।” ভিডিওটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই না করে তিন দিন ধরে ঠান্ডা মাথায় পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান চালায়।
অনুসন্ধানে যা জানা গেছে
স্থানীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাহামুদুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে এলাকার কিছু অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। বিশেষ করে ভোলা থেকে এসে চরহোগলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করা এক পরিবারের কয়েকজন যুবক—আজিম, আমজাদ, নুর নবী ও হাবিব—দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় হাঁস-মুরগি চুরি ও নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল।
ওই পরিবারের সঙ্গে হাসানের পারিবারিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ফলে তারা চুরির বিষয়টি হাসানকে জানালে, হাসান একাধিকবার ঐ যুবকদের সতর্ক ও শাসন করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় এই কিশোর গ্যাং তার ওপর ক্ষিপ্ত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রামবাসীর বক্তব্য:
চরহোগলা মালেক মিয়া বাড়ির সন্তান মাহামুদুল হাসানকে স্থানীয়রা একজন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে চেনেন। যদিও তার ব্যক্তিগত জীবনে কিছু বিতর্ক বা দুর্বলতা রয়েছে, তবুও তিনি এলাকার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, “এই ঘটনার পেছনে ব্যক্তিগত শত্রুতা ও পরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে।”
ঘটনার দিন যা ঘটেছিল:
তদন্তে জানা যায়, ঘটনার দিন হামলার সময় হাসান প্রাণভয়ে পাশের এক বাড়িতে আশ্রয় নেন—যা প্রবাসী নারী মর্জিনা বেগমের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। সেখানে গিয়েই তিনি উল্টো হামলার শিকার হন। পরে খবর পেয়ে মেহেন্দিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রায় দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত হাসানকে উদ্ধার করে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের লক্ষ্যে মেহেন্দিগঞ্জ টাইমসের একটি বিশেষ অনুসন্ধানী দল সরেজমিনে কাজ করছে। তারা হাসানের সাথে তিন ঘণ্টা ধরে বিস্তারিত আলাপ ও ভিডিও সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি অভিযুক্তদের পরিবার ও আশপাশের গ্রামবাসীর সাথেও কথা বলছে টিমটি।
প্রধান প্রতিবেদক জানান—
এই ঘটনাটি নিছক একটি মারামারি নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে এক গভীর পরিকল্পনা ও সামাজিক ষড়যন্ত্রের ছায়া। আমরা বিষয়টির প্রতিটি দিক যাচাই করছি। সত্য-মিথ্যা উন্মোচনের আগে কোনো পক্ষের প্রতি অবস্থান না নেওয়াই আমাদের নীতি।”
মেহেন্দিগঞ্জ টাইমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার সম্পূর্ণ তদন্ত, সাক্ষাৎকার ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শেষে বিস্তারিত ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে।
সত্যিকার ঘটনার সব দিক তুলে ধরতে তারা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিচ্ছেন, যাতে করে জনগণ জানতে পারে—মাহামুদুল হাসান সত্যিই অপরাধী, নাকি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার?



















