
আসিফ চৌধুরী, বিশেষ সংবাদদাতা ঢাকা :
১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রাম। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী শাসনের বিরুদ্ধে চলমান সেই সংগ্রামে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন, কারাবরণ করেছেন, হয়েছেন গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার। কেউ হারিয়েছেন ঘরবাড়ি, কেউবা জীবিকা। তবুও তারা ছিলেন অবিচল। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে একচুলও নড়েননি আদর্শ থেকে। শুধু ‘বিএনপি করেন’—এই অপরাধে হারিয়েছেন সরকারি চাকরি, পুড়েছে দোকান, বন্ধ হয়েছে ব্যবসা, আবার অনেকে রাত কাটিয়েছেন মাঠে-ঘাটে, পাটখেতে। জীবন ছিল দুর্বিষহ, কিন্তু স্বপ্ন ছিল একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।
অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ সেই ত্যাগীদের জায়গা করে নিয়েছে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নব্য বিএনপিরা। ৫ আগস্টের পর রাজনীতির হাওয়া ঘুরতেই যারা আওয়ামী ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, সুবিধাবাদী ও হাইব্রিড পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন, তারাই এখন বড় বিএনপি হয়ে উঠেছেন। যাদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সঙ্গে ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে ছিলেন, তারাই এখন নেতাদের চারপাশে। দলে প্রবেশ করেই তারা ছিনিয়ে নিচ্ছেন গুরুত্বপূণ পদ-পদবী, দখলে নিচ্ছেন কার্যালয়, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগেও জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে দীর্ঘ আন্দোলনে জর্জরিত ত্যাগী নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা।
দলটির ভেতরে এখন স্পষ্ট দুটি চিত্র। একদিকে ১৭ বছরের দুঃসহ লড়াইয়ের কর্মীরা, যারা চরম প্রতিকূলতা পেরিয়ে এখনো বিশ্বাস করেন—খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আদর্শই বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষার একমাত্র পথ। অন্যদিকে হঠাৎ উদয় হওয়া বসন্তের কোকিলরা, যাদের কাছে রাজনীতি মানে শুধুই ক্ষমতার ভাগ, আর লাভের হিসাব।
বিশ্লেষকদের মতে, এই হাইব্রিড BNP-এর দাপট যেমন দলের আদর্শিক ভিত্তিকে দুর্বল করছে, তেমনি নানাবিধ অপকর্মের দায় দলকে বহন করতে হচ্ছে—যা আগামী দিনের জন্য ভয়াবহ অশনিসংকেত।
শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ১ নং ইউনিটে (১,২,৩) ওয়ার্ডে বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, মো: আসিফ চৌধুরী বলেন, –”আজ আমরা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। বিএনপি এক সময় যাদের ত্যাগ, রক্ত, ঘাম ও আদর্শের ভিত্তিতে দাঁড়িয়েছিল—তাদের অনেকেই আজ কোণঠাসা। কারণ, দলে এক শ্রেণির ‘নব্য নেতা’ দাপটের সঙ্গে এগিয়ে আসছে, যাদের অনেকের রাজনৈতিক শিকড় দুর্বল, দায়বদ্ধতা নেই। এ চিত্র শুধু হতাশাজনক নয়, আমাদের ভবিষ্যতের জন্যও হুমকি।
আমি বলতে চাই—বিএনপি কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়, এটি একটি আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক দল। এখানে ত্যাগীদের সম্মান দিতে হবে, তাদের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বকে কাজে লাগাতে হবে।
আর যারা অপকর্মে জড়াবে, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে—তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়াই এখন সময়ের দাবি। নয়তো নব্যদের দাপটে ত্যাগীরা হারিয়ে যাবে, আর আমরা হারাবো আমাদের রাজনৈতিক মূলধন।”
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই নব্য বিএনপিদের দাপটে আদর্শিক কর্মীরা যদি কোণঠাসা হয়েই থাকেন, তাহলে দলের আগামী দিনগুলো কীভাবে এগোবে?
বিশ্বস্ত ত্যাগী নেতাকর্মীদের পুনরুদ্ধার না করলে বিএনপির রাজনীতি হতে পারে আরেকটি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি। রাজনীতির মৌসুমী পাখিদের চেনা কঠিন নয়। কিন্তু ইতিহাস কখনো ক্ষমা করে না। যারা ত্যাগ করেছেন, লড়েছেন—তারাই যে আসল শক্তি, তা প্রমাণ করেছে অতীত। এখন প্রয়োজন সেই শক্তির যথাযথ মূল্যায়ন। না হলে ‘বসন্তের কোকিল’রা শেষ করে দেবে বিএনপির দীর্ঘ লড়াইয়ের সব অর্জন।