, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ও আহলে বাইত এর স্বরণে পুরান ঢাকায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।  কেরানীগঞ্জে বিদেশি রিভলবারসহ ২ যুবক গ্রেফতার : বরিশাল জেলা উত্তর কৃষকদলের আহ্বায়ক নলী মোঃ জামাল হোসেন : পরীক্ষিত ও কর্মীবান্ধব নেতা  কেরানীগঞ্জে ফোম কারখানায় আগুন ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল তুগুজকুমালাক ডে উদযাপন: গোসাইরহাটে বিএনপি’র ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএস-এজিএস তিন শীর্ষ পদেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয় সুদূর প্রবাসে থেকেও বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন জিয়া সাইবার ফোর্স জেডসিএফ নেতা রবিউল খন্দকার আগামী ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে–আলহাজ্ব আমান উল্লাহ আমান  জিয়া সাইবার ফোর্স জেডসিএফ-এর বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র: সরকারের হস্তক্ষেপ এখনই জরুরি মানচিত্র রক্ষায়

  • প্রকাশের সময় : ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ১৭৭ পড়া হয়েছে

Oplus_0

 

আতিকুর রহমান:-

 

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা একসময় ছিল উর্বর কৃষিভূমি, কোলাহলপূর্ণ গ্রামীণ জনপদ ও নদীবেষ্টিত নদীমাতৃক এক সম্ভাবনাময় জনপদ। কিন্তু আজ সেই মেহেন্দিগঞ্জ নদীভাঙনের করাল গ্রাসে দিশেহারা। প্রতি বছর পদ্মা, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাজার, এমনকি সরকারি স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যেতে পারে মেহেন্দিগঞ্জ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে চরম উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ক্ষোভ।

 

মেহেন্দিগঞ্জের ভাঙনের ইতিহাস:

প্রায় এক দশক ধরেই মেহেন্দিগঞ্জ নদীভাঙনের অন্যতম হটস্পট। উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন, উলানিয়া ইউনিয়ন,চানপুর ইউনিয়ন,চরএককরিয়া, কাজিরহাট,শ্রীপুর ইউনিয়ন আন্দার মানিক, বিদ্যানন্দপুর, মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, সংলগ্ন এলাকা এবং লঞ্চঘাট, পৌর এলাকার কিছু অংশে ভয়াবহ নদীভাঙন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বহু হাটবাজার ও হাজার হাজার একর আবাদি জমি।

 

ভাঙনের তীব্রতা ও বর্তমান অবস্থা:

২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে মে ও জুন মাসে তীব্র ঢেউয়ে প্রায় এলাকা নদী ভাঙ্গনের মুখে পরেছে । তার মধ্যে চাঁনপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড প্রায় এলাকা নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। চলতি বছরেই প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

 

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন :-

এই ঘরটা তিনবার করেছি, তিনবারই নদীতে গেছে। এখন আর শক্তি নাই। সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, আমরা কোথায় যাব?”

 

একইভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলেন :-

স্কুল নদীতে গেছে। এখন পড়ালেখা বন্ধ। ভাঙনের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন যুদ্ধ করি।

 

পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই: ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা:-

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সচেতন মহল বারবার নদীশাসন ও প্রতিরক্ষা বাঁধের দাবি জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি উল্লেখযোগ্য কিছু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে প্রতি বছর নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলে কার্যক্রম চালানো হয়, যেটা পুরোপুরি অকার্যকর।

স্থানীয় নেতারা বলেন,:-

পাউবো কাগজে কলমে প্রকল্প দেখায়, কিন্তু বাস্তবে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। বারবার দাবি করেও সাড়া মেলেনি।

এই অঞ্চলের জনগণ বারবার ভোট দিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নদীভাঙনের প্রশ্নে তারা এখনো অবহেলিত। এটা চরম অবিচার।

 

মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা:-

নদীভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে মেহেন্দিগঞ্জে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার পরিবার ছিন্নমূল হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই ভয়াবহ সংকটে পড়ছে মানুষ।

 

নদীভাঙন বিশেষজ্ঞদের মতামত

মেহেন্দিগঞ্জের ভাঙন রোধে একমাত্র সমাধান হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি নদীশাসন ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা বাঁধ। তা না হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।

 

সরকারের প্রতি আহ্বান:-

১. দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীশাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করুন।
২. মেহেন্দিগঞ্জকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ নদীভাঙন অঞ্চল’ ঘোষণা করে জাতীয় জরুরি সহায়তা দিন।
৩. বিলীন পরিবারগুলোর পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করুন।
৪. নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।
৫. পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনুন।

 

মেহেন্দিগঞ্জ শুধু একটি জনপদের নাম নয় এটি একটি ইতিহাস, একটি জনশ্রুতি, একটি জীবনধারা। নদীভাঙনের ধ্বংসযজ্ঞে এই জনপদ হারিয়ে গেলে শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, হারাবে বহু মানুষের স্বপ্ন, সুখ-দুঃখের সংসার, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ।

 

সরকার ও প্রশাসনের কাছে এখনই সময় সচেতন হওয়ার। বিলম্ব হলে মেহেন্দিগঞ্জকে আর মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না—এটি হবে ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।

 

জনপ্রিয়

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ও আহলে বাইত এর স্বরণে পুরান ঢাকায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে মেহেন্দিগঞ্জের মানচিত্র: সরকারের হস্তক্ষেপ এখনই জরুরি মানচিত্র রক্ষায়

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

 

আতিকুর রহমান:-

 

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা একসময় ছিল উর্বর কৃষিভূমি, কোলাহলপূর্ণ গ্রামীণ জনপদ ও নদীবেষ্টিত নদীমাতৃক এক সম্ভাবনাময় জনপদ। কিন্তু আজ সেই মেহেন্দিগঞ্জ নদীভাঙনের করাল গ্রাসে দিশেহারা। প্রতি বছর পদ্মা, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে শত শত ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাজার, এমনকি সরকারি স্থাপনাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

এভাবে চলতে থাকলে মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যেতে পারে মেহেন্দিগঞ্জ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে চরম উদ্বেগ, আতঙ্ক ও ক্ষোভ।

 

মেহেন্দিগঞ্জের ভাঙনের ইতিহাস:

প্রায় এক দশক ধরেই মেহেন্দিগঞ্জ নদীভাঙনের অন্যতম হটস্পট। উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন, উলানিয়া ইউনিয়ন,চানপুর ইউনিয়ন,চরএককরিয়া, কাজিরহাট,শ্রীপুর ইউনিয়ন আন্দার মানিক, বিদ্যানন্দপুর, মেহেন্দিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, সংলগ্ন এলাকা এবং লঞ্চঘাট, পৌর এলাকার কিছু অংশে ভয়াবহ নদীভাঙন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বহু হাটবাজার ও হাজার হাজার একর আবাদি জমি।

 

ভাঙনের তীব্রতা ও বর্তমান অবস্থা:

২০২৫ সালের বর্ষা মৌসুমে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে মে ও জুন মাসে তীব্র ঢেউয়ে প্রায় এলাকা নদী ভাঙ্গনের মুখে পরেছে । তার মধ্যে চাঁনপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড প্রায় এলাকা নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। চলতি বছরেই প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।

 

স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন :-

এই ঘরটা তিনবার করেছি, তিনবারই নদীতে গেছে। এখন আর শক্তি নাই। সরকার যদি পাশে না দাঁড়ায়, আমরা কোথায় যাব?”

 

একইভাবে স্কুলের শিক্ষার্থীরা বলেন :-

স্কুল নদীতে গেছে। এখন পড়ালেখা বন্ধ। ভাঙনের সঙ্গে আমরা প্রতিদিন যুদ্ধ করি।

 

পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেই: ক্ষোভে ফুঁসছে জনতা:-

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও সচেতন মহল বারবার নদীশাসন ও প্রতিরক্ষা বাঁধের দাবি জানালেও বাস্তবায়ন হয়নি উল্লেখযোগ্য কিছু। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে প্রতি বছর নামমাত্র জিওব্যাগ ফেলে কার্যক্রম চালানো হয়, যেটা পুরোপুরি অকার্যকর।

স্থানীয় নেতারা বলেন,:-

পাউবো কাগজে কলমে প্রকল্প দেখায়, কিন্তু বাস্তবে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেই। বারবার দাবি করেও সাড়া মেলেনি।

এই অঞ্চলের জনগণ বারবার ভোট দিয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নদীভাঙনের প্রশ্নে তারা এখনো অবহেলিত। এটা চরম অবিচার।

 

মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা:-

নদীভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে মেহেন্দিগঞ্জে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার পরিবার ছিন্নমূল হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা, শিক্ষা—সব ক্ষেত্রেই ভয়াবহ সংকটে পড়ছে মানুষ।

 

নদীভাঙন বিশেষজ্ঞদের মতামত

মেহেন্দিগঞ্জের ভাঙন রোধে একমাত্র সমাধান হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি নদীশাসন ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিরক্ষা বাঁধ। তা না হলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।

 

সরকারের প্রতি আহ্বান:-

১. দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীশাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করুন।
২. মেহেন্দিগঞ্জকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ নদীভাঙন অঞ্চল’ ঘোষণা করে জাতীয় জরুরি সহায়তা দিন।
৩. বিলীন পরিবারগুলোর পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করুন।
৪. নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করুন।
৫. পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির আওতায় আনুন।

 

মেহেন্দিগঞ্জ শুধু একটি জনপদের নাম নয় এটি একটি ইতিহাস, একটি জনশ্রুতি, একটি জীবনধারা। নদীভাঙনের ধ্বংসযজ্ঞে এই জনপদ হারিয়ে গেলে শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, হারাবে বহু মানুষের স্বপ্ন, সুখ-দুঃখের সংসার, ঐতিহ্য ও ভবিষ্যৎ।

 

সরকার ও প্রশাসনের কাছে এখনই সময় সচেতন হওয়ার। বিলম্ব হলে মেহেন্দিগঞ্জকে আর মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না—এটি হবে ইতিহাসের নির্মম এক অধ্যায়।