, শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ও আহলে বাইত এর স্বরণে পুরান ঢাকায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।  কেরানীগঞ্জে বিদেশি রিভলবারসহ ২ যুবক গ্রেফতার : বরিশাল জেলা উত্তর কৃষকদলের আহ্বায়ক নলী মোঃ জামাল হোসেন : পরীক্ষিত ও কর্মীবান্ধব নেতা  কেরানীগঞ্জে ফোম কারখানায় আগুন ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল তুগুজকুমালাক ডে উদযাপন: গোসাইরহাটে বিএনপি’র ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচন: ভিপি-জিএস-এজিএস তিন শীর্ষ পদেই শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয় সুদূর প্রবাসে থেকেও বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন জিয়া সাইবার ফোর্স জেডসিএফ নেতা রবিউল খন্দকার আগামী ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে–আলহাজ্ব আমান উল্লাহ আমান  জিয়া সাইবার ফোর্স জেডসিএফ-এর বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

এআই প্রযুক্তি—আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ: বাংলাদেশে গুজব ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা

  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
  • ১১৪ পড়া হয়েছে

 

মোঃ আতিকুর রহমান:-

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির বিস্তার যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনি এটি নানা ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, মিথ্যা তথ্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এআই দ্রুতই সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হতে পারে।

 

১. এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও আশীর্বাদ

শিক্ষা ও গবেষণা: এআই দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ, অনুবাদ, এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

স্বাস্থ্যখাত: রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরামর্শ এবং ওষুধ আবিষ্কারে এআই ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু দেশে সাফল্য দেখিয়েছে।

অর্থনীতি: শিল্প উৎপাদন, ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এআই ভূমিকা রাখতে পারে।

দুর্যোগ মোকাবিলা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে এআই অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

 

২. গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঝুঁকি

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো নতুন নয়, তবে এআই এ প্রবণতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডিপফেক ভিডিও: কারো কণ্ঠ ও মুখমণ্ডল নকল করে মিথ্যা ভিডিও তৈরি করা এখন সহজ হয়ে গেছে।

ভুয়া খবর তৈরি: এআই চালিত টুল দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাস্তবসম্মত কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ লেখা সম্ভব।

সামাজিক অস্থিরতা: ধর্ম, রাজনীতি বা সামাজিক ইস্যুতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়া সম্ভব।

৩. ব্যক্তিগত শত্রুতায় এআই-এর অপব্যবহার

প্রতিশোধমূলক ষড়যন্ত্র: ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে কারো সম্মান নষ্ট করতে মিথ্যা ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হতে পারে।

ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি: ডিপফেক কনটেন্ট ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ইতোমধ্যেই বিশ্বে ঘটছে।

মানসিক ক্ষতি: অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক জীবনে বড় ধাক্কা দিতে পারে।

৪. আইনি ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে সাইবার আইন থাকলেও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা এখনো স্পষ্ট নয়।

আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা: প্রযুক্তি সনাক্ত ও প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল সীমিত।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: গ্লোবাল এআই প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে কার্যকর সমন্বয় জরুরি, কারণ অধিকাংশ ভুয়া কনটেন্ট বিদেশি সার্ভার থেকে ছড়ায়।

 

৫. সরকারের করণীয়

আইন প্রণয়ন: ডিপফেক ও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধে কঠোর ও হালনাগাদ আইন প্রণয়ন।

প্রযুক্তিগত সুরক্ষা: গুজব সনাক্তকারী ও প্রতিরোধকারী এআই টুল তৈরি ও ব্যবহার।

জনসচেতনতা: জনগণকে এআই-ভিত্তিক মিথ্যা তথ্য চেনার পদ্ধতি শেখানো।

দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা: ভুয়া কনটেন্ট পাওয়া মাত্র সেটি অপসারণের জন্য বিশেষ সেল গঠন।

 

এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এটি সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে সরকার, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম এবং জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে। নইলে গুজব, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রচারণা আমাদের সমাজে গভীর বিভক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

 

জনপ্রিয়

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ও আহলে বাইত এর স্বরণে পুরান ঢাকায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এআই প্রযুক্তি—আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ: বাংলাদেশে গুজব ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা

প্রকাশের সময় : ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫

 

মোঃ আতিকুর রহমান:-

বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির বিস্তার যেমন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, তেমনি এটি নানা ধরনের ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রযুক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, মিথ্যা তথ্য এবং ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের আশঙ্কা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এআই দ্রুতই সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিতে পরিণত হতে পারে।

 

১. এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও আশীর্বাদ

শিক্ষা ও গবেষণা: এআই দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ, অনুবাদ, এবং শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

স্বাস্থ্যখাত: রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পরামর্শ এবং ওষুধ আবিষ্কারে এআই ইতিমধ্যেই বিশ্বের বহু দেশে সাফল্য দেখিয়েছে।

অর্থনীতি: শিল্প উৎপাদন, ব্যাংকিং, ই-কমার্স ও কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এআই ভূমিকা রাখতে পারে।

দুর্যোগ মোকাবিলা: বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে এআই অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

 

২. গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর ঝুঁকি

বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো নতুন নয়, তবে এআই এ প্রবণতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

ডিপফেক ভিডিও: কারো কণ্ঠ ও মুখমণ্ডল নকল করে মিথ্যা ভিডিও তৈরি করা এখন সহজ হয়ে গেছে।

ভুয়া খবর তৈরি: এআই চালিত টুল দিয়ে মুহূর্তের মধ্যে বাস্তবসম্মত কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ লেখা সম্ভব।

সামাজিক অস্থিরতা: ধর্ম, রাজনীতি বা সামাজিক ইস্যুতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়া সম্ভব।

৩. ব্যক্তিগত শত্রুতায় এআই-এর অপব্যবহার

প্রতিশোধমূলক ষড়যন্ত্র: ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে কারো সম্মান নষ্ট করতে মিথ্যা ছবি বা ভিডিও তৈরি করা হতে পারে।

ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি: ডিপফেক কনটেন্ট ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ইতোমধ্যেই বিশ্বে ঘটছে।

মানসিক ক্ষতি: অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ভুক্তভোগীর মানসিক ও সামাজিক জীবনে বড় ধাক্কা দিতে পারে।

৪. আইনি ও নীতিগত চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে সাইবার আইন থাকলেও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধের জন্য নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা এখনো স্পষ্ট নয়।

আইন প্রয়োগে সীমাবদ্ধতা: প্রযুক্তি সনাক্ত ও প্রমাণ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল সীমিত।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: গ্লোবাল এআই প্ল্যাটফর্মগুলোর সাথে কার্যকর সমন্বয় জরুরি, কারণ অধিকাংশ ভুয়া কনটেন্ট বিদেশি সার্ভার থেকে ছড়ায়।

 

৫. সরকারের করণীয়

আইন প্রণয়ন: ডিপফেক ও এআই-ভিত্তিক গুজব প্রতিরোধে কঠোর ও হালনাগাদ আইন প্রণয়ন।

প্রযুক্তিগত সুরক্ষা: গুজব সনাক্তকারী ও প্রতিরোধকারী এআই টুল তৈরি ও ব্যবহার।

জনসচেতনতা: জনগণকে এআই-ভিত্তিক মিথ্যা তথ্য চেনার পদ্ধতি শেখানো।

দ্রুত প্রতিকার ব্যবস্থা: ভুয়া কনটেন্ট পাওয়া মাত্র সেটি অপসারণের জন্য বিশেষ সেল গঠন।

 

এআই প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে উন্নয়নের শক্তিশালী হাতিয়ার, তবে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এটি সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে সরকার, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যম এবং জনগণকে একসাথে কাজ করতে হবে। নইলে গুজব, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা প্রচারণা আমাদের সমাজে গভীর বিভক্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।